ঢাকা, শনিবার ০৬, ডিসেম্বর ২০২৫ ৪:৫৬:২৫ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
আজ আসছে না এয়ার অ্যাম্বুলেন্স, খালেদা জিয়ার লন্ডন যাত্রা পেছাল খালেদা জিয়াকে দেখতে এভারকেয়ারে জুবাইদা রহমান ‘শেখ হাসিনাকে ফেরাতে ভারতের ইতিবাচক সাড়া নেই’ বেশির ভাগ সবজিই ৬০-৮০ টাকার ওপরে বন্যায় সহায়তা: বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানালেন শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী

স্মৃতিতে অম্লান দিলারা আপা 

আকবর হায়দার কিরন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:৪৯ পিএম, ২০ মার্চ ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি।

ফাইল ছবি।

দু’দিন আগেও টেলিফোনে রোকেয়া হায়দার আপা বলছিলেন দিলারা আপার শরীরটা তেমন ভালো নেই। তিন দিন আগে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলেন। রোকেয়া আপার সাথে যখনই কথা হয় তখন দিলারা আপার নাম আসতো। আজ (১৯ মার্চ) বেড়াতে গিয়েছিলাম নিউ ইয়র্ক প্রবাসী সবচেয়ে বয়োজৈষ্ঠ সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ ভাইজানের বাসায়। কথা প্রসঙ্গে রোকেয়া আপা ও দিলারা আপাকে নিয়ে অনেক স্মৃতি ওঠে আসে তাঁর মনে। আনুমানিক তিরিশ মিনিট পর রোকেয়া আপার ফোন এলো। তাঁর কন্ঠ শুনেই আমার হৃদয়টা যেন ধক্ করে উঠলো, যেন কোন খারাপ খবর। আপা অত্যন্ত ভারাক্রান্ত কন্ঠে বললেন, দিলারা আপা আর নেই। ম্যারিল্যান্ডে তিনি দুই মেয়ের সাথে থাকতেন। সম্প্রতি তাঁর শরীরটা ভালো যাচ্ছিল না। 
দিলারা হাশেম আপার সাথে আমার সম্পর্ক চার দশকেরও বেশি। আমি তখন ছাত্র ছিলাম এবং ভয়েস অব আমেরিকা ফ্যান ক্লাব করতাম। দিলারা আপাকে নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জ, আমেরিকান বাইসেন্টেনিয়াল হলসহ নানা জায়গায় আমাদের অনেক বিশেষ ও জমজমাট সম্মেলন হয়। একবার আপা ও তাঁর স্বামী হাশেম ভাই উঠেছিলেন হোটেল সোনারগাঁয় । আমাকে সাথে নিয়ে ওখান থেকে বেরিয়ে একটি বেবীট্যাক্সী নিলেন এবং দু’জনের মাঝখানে আমাকে বসালেন। যেন মাঝে বসালেন একটা বিগ বেবিকে!  ঠিক এই সময়টায় ভয়েস অব আমেরিকার দক্ষিন এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্য বিভাগের পরিচালক স্টেনলি স্রেগার ঢাকা সফরে ছিলেন। তোপখানা রোড়ে আমাদের সামনে কিছুক্ষনের জন্য রিক্সায় চড়ে বেড়ালেন স্রেগার ও দিলারা আপা। আমাদের স্মৃতিতে এখনো অম্লান কত স্মৃতি।
আমার প্রায়ই আড়াই যুগের প্রবাস জীবন নিউ ইয়র্ক সিটিতে। দিলারা আপার সাথে এখানে কতোবার দেখা হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। মুক্তধারার বইমেলায় তিনি এসেছেন বেশ কয়েকবার । আমার সাথে সবসময় দেখাসাক্ষাত হয়েছে। আমার জীবনের অত্যন্ত স্মৃতিময় দু’টি ছবি দিলারা আপা ও রোকেয়া আপার সাথে। প্রায় দুই দশক আগে ও ২০১৯ সালে এই ছবিতে আমি বসে আছি তাঁদের মাঝখানে। অবশ্যই বইমেলায় এবং ছবি তুলেছেন প্রিয় নিহার সিদ্দিকী ভাই।
দিলারা আপা অবসর নেয়ার পর বছর চারেক আগে তাঁর একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। ফোবানার একটি সম্মেলন হয় ভার্জিনিয়ায়। রোকেয়া আপা অনেক কষ্ট করে তাঁকে নিয়ে আসেন বিশেষ সেই হোটেল রুমে। নিহার ভাইয়ের ক্যামেরার সামনে আপাকে নিয়ে গল্প করেছিলাম। সেই বিশেষ আলাপচারিতায় রোকেয়া আপাও এক পর্যায়ে যোগ দেন। আমার সেই হোটেল রুমে এই সময় আরও ছিলেন কাজী শামসুল হক ভাই ও তাহিরা কিবরিয়া অনু। একই দিন আমি ইন্টারভিউ করেছিলাম ইকবাল বাহার চৌধুরী ভাইয়ের। সেদিন ফোবানার অনুষ্ঠানের সময় লবিতে বিশ্বজিত সাহার বুকস্টলে গিয়েছিলাম দুই আপাকে নিয়ে। 
দিলারা আপার সাথে শেষ টেলিফোনে গল্প করা হয় গত অগাস্ট মাসে। তাঁর জন্মদিন নিয়ে কিছুটা দীর্ঘ আলাপচারিতা হয় ফোন রেকর্ডিংএ। নিউ ইয়র্ক প্রবাসী একজন পুরনো দিনের বাংলা গানের মহাভক্ত আতিক রহমান। সেই সাদাকালোর দিনগুলোতে দিলারা আপার মধুর কন্ঠে করাচি ও ঢাকায় রেকর্ড করা অনেক গানের ডিস্ক সংগ্রহ করেন আতিক ভাই এবং ইউটিউবে আপলোড করেন। দিলারা আপা আমার কাছ থেকে শুনে এবং লিংক পেয়ে শুনে বিস্মিত ও আনন্দিত হন। 
‘মাটির গান মানুষের গান’  বিশেষ অনুষ্ঠান করতেন আমেরিকান কান্ট্রি সং নিয়ে। কোন অনুষ্ঠান এর চেয়ে আকর্ষনীয় হতে পারে! ন্যাশভিল এ গিয়ে বিখ্যাত শিল্পীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। প্রতিটি গানের অর্থ বলতে গিয়ে ছন্দে ছন্দে বলতেন। এই অনুষ্ঠান শোনার জন্য গানপাগল শ্রোতারা যেন অস্থির হয়ে থাকতেন। একজন মানুষ এতো গুনের সমাহার হতে হয় ভাবলেই অবাক লাগতো। 
দিলারা আপার লেখালেখির জায়গা ছিলো লাইব্রেবী অব কংগ্রেস। সেখানে বসে লিখেছেন ঐতিহাসিক রচনা। ভিওএ বাংলা বিভাগের ৫০ বছর পুর্তি উৎসবে সেদিন বিরাট মিলনায়তনে শ্রোতা দর্শক হিসেবে আমি, সাঈদুর রব, হোসেন সৈয়দ, নিহার সিদ্দিকী ও আবীর আলমগীর ছিলাম। ভিওএ’র ৭৫ বর্ষপূর্তি  উৎসবে আবার সৌভাগ্য হলো আমার। সাথে ছিলেন নিহার সিদ্দিকী, মিনহাজ আহমেদ, পুলক মাহমুদ ও শিব্বীর আহমেদ। রোকেয়া আপার গভীর আন্তরিকতার কারণে বাংলা বিভাগের যেন এক ঐতিহাসিক মিলনমেলা হয়ে গেলো। যোগ দিলেন কাফি খান, ইকবাল আহমেদ, সৈয়দ জিয়াউর রহমান, দিলারা হাশেম, ইকবাল বাহার চৌধুরী, মাসুমা খাতুন ও ওয়াহেদ আল হোসেনী। সরকার কবীর ভাই যেন সবার মাঝে অত্যন্ত হৃদয়ভরা অবস্থান।  
ভিওএ’র ৭৫ বছরপুর্তি হলেও আমাদের কাছে যেন বাংলা বিভাগের একটি যেন লাইফটাইম এচিভমেন্ট অনুষ্ঠান। সেই বিশাল মিলনায়তনে দিলারা আপাসহ সবাই উপস্থিত ছিলেন। মঞ্চ থেকে একমাত্র ভিওএ ফ্যান ক্লাবের অন্যতম সংগঠক হিসেবে আমার নাম উচ্চারিত হলে আমি অত্যন্ত আনন্দ ও বিস্মিত হই। 
দিলারা আপার সাথে আমার জীবনে শেষ দেখা সেই দিন। আমার সাথে তাঁর সংক্ষিপ্ত সাক্ষাত্কার বিশেষ দিনটিতে। তিনি যেন মধ্যমনি হয়ে বলেছিলেন আমাদের সামনে। রোকেয়া আপা একটি বিশেষ লাইভ করেছিলেন সেদিন। আমি নিহার ভাইসহ সবার সাথে কথা বলে রেকর্ড করেছিলাম। এখন তা যেন অনন্য ইতিহাস। যাঁরা আমার সাথে কথা বললেন তাঁদের ভেতর চারজন একে একে আমাদের জগতকে অন্ধকার করে চলে গেলেন। তারা যথাক্রমে সৈয়দ জিয়াউর রহমান, ইকবাল আহমেদ, কাফি খান ও সবশেষে দিলারা হাশেম। 
আমাদের জীবন ও জগত থেকে চলে গেলেন পরম শ্রদ্ধেয় দিলারা আপা। কিন্তু তিনি রেখে গেছেন অনেক কিছু। আমার জন্য প্রচন্ড বিস্ময় ছিলো দিলারা আপার ওয়েবসাইট। যাঁর সাথে বিশিষ্ট ও খ্যাতিমানদের নির্বাচিত কিছু ছবি রয়েছে সেখানে। যেমন উত্তম ও সুপ্রিয়া, সত্যজিৎ রায়, শাবানা আজমী, বুলবুল আহমেদ, ববিতা, নওশাদ, সৈয়দ শামসুল হক, জনি ক্যাশ, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, সেলিনা হোসেন, রোকেয়া আপা, মাসুমা খাতুনসহ আরও অনেক। আমার পরম সৌভাগ্য তাঁর বিশেষ ফটো গ্যালারিতে আমিও স্থান পেয়েছি। 
দিলারা আপা আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন অন্য জগতে। সেই ৭৬ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার তিনি পেয়েছেন। কিন্তু তাকে অবশ্যই একুশে পদক ও স্বাধীনতা পদক দেওয়া উচিত ছিলো। তাঁর মতো শক্তিমান লেখক তুলনাহীন। তিনি আমাদের হৃদয়ে অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন। প্রিয় দিলারা আপা, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন ভালো থাকবেন, শান্তিতে থাকবেন।